রক্তসংবহন তন্ত্র (পাঠ ৭-৮)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান পরিপাকতন্ত্র এবং রক্ত সংবহনতন্ত্র | - | NCTB BOOK
109
109

যে প্রক্রিয়ায় প্রাণিদেহে রক্ত পরিবহনের কাজ সম্পন্ন হয় তাকে সংবহন প্রক্রিয়া বলে। রক্ত, হৃৎপিন্ড, ধমনি, শিরা এবং লসিকা ও লসিকাবাহী নালির সমন্বয়ে মানব দেহের সংবহনতন্ত্র গঠিত। যে তন্ত্রের মাধ্যমে দেহে রক্ত সঞ্চালিত হয় তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে। হৃৎপিণ্ড, রক্ত ও রক্তবাহী নালির সমন্বয়ে রক্ত সংবহনতন্ত্র গঠিত।

রক্ত ও রক্তের উপাদান

তোমরা মুরগি, গরু অথবা ছাগল জবাই করতে দেখে থাকবে। জবাই করার সময় ক্ষতস্থান থেকে ফিল্কি দিয়ে রক্ত বের হয়। এই রক্তের রং কেমন? রক্ত কী ধরনের পদার্থ? রক্ত ঘন লাল রঙের একটি তরল পদার্থ। এটি এক ধরনের তরল যোজক টিস্যু। রক্তের স্বাদ ক্ষারধর্মী। রক্তের উপাদান দুইটি, যথা-

১। রক্তরস
২। রক্তকণিকা

১। রক্তরস: রক্তরস রক্তের তরল অংশ। সাধারণত রক্তের শতকরা ৫৫ ভাগ রক্তরস। এতে আমিষ, লবণ ও অস্ত্র থেকে শোষিত খাদ্য উপাদান থাকে। রক্তরসে রক্তকণিকা ভাসমান অবস্থায় থাকে। এতে ফাইব্রিনোজেন নামে একটি উপাদান থাকে যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। রক্তরস দেহের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন, খাদ্যসার, হরমোন ইত্যাদি বহন করে।
দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ (যেমন-কার্বন ডাই-অক্সাইড, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ইত্যাদি) বহন করে বিভিন্ন রেচন অঙ্গের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয়।

২। রক্তকণিকা: রক্তে তিন ধরনের কণিকা রয়েছে। যথা-
ক. লোহিত রক্তকণিকা
খ. শ্বেত রক্তকণিকা
গ. অণুচক্রিকা

ক. লোহিত রক্তকণিকা লোহিত রক্তকণিকার জন্য রক্তের রং লাল দেখায়। এর মধ্যে হিমোগ্লোবিন নামক একটি রঞ্জক পদার্থ থাকে। হিমোগ্লোবিনের সাথে অক্সিজেন যুক্ত হয়ে দেহকোষে পৌঁছায়। লোহিত রক্তকণিকা উভঅবতল (উভয় পৃষ্ঠে খাদ আছে)। চাকতির মতো গোলাকার কোষ। পরিণত লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না। লোহিত রক্তকণিকা যকৃত ও অস্থিমজ্জায় তৈরি হয়।

খ. শ্বেত রক্তকণিকা: শ্বেত রক্তকণিকা লোহিত রক্তকণিকার চেয়ে আকারে কিছুটা বড়ো ও অনিয়মিত আকারের হয়। এদের নিউক্লিয়াস আছে। প্লীহা ও অস্থিমজ্জায় এদের জন্ম। দেহে কোনো রোগ-জীবাণু প্রবেশ করলে শ্বেত রক্তকণিকা সেগুলোকে ধ্বংস করে। শ্বেত রক্তকণিকা দেহের প্রহরীর মতো কাজ করে। এদের সৈনিকের সাথে তুলনা করা হয়।

গ. অণুচক্রিকা: অণুচক্রিকা দেখতে গোলাকার বা বৃত্তের মতো। এরা লোহিত রক্তকণিকার চেয়ে আকারে ছোটো হয় ও নিউক্লিয়াস থাকে না। এরা গুচ্ছাকারে থাকে। এদের উৎপত্তি লোহিত অস্থিমজ্জায়। দেহের কোনো অংশ কেটে রক্তপাত ঘটলে অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এদের প্লেটলেটও বলে।

রক্তের কাজ: রক্ত আমাদের দেহের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। রক্ত দেহে নানা রকম কাজ করে। যথা-

১. খাদ্য পরিবহন: আমরা যে খাবার খাই, পরিপাকের পর এগুলো সরল উপাদানে পরিণত হয় এবং রক্তের সাথে মিশে যায়। রক্ত সেই খাদ্যের সারাংশকে দেহের সর্বত্র বহন করে নিয়ে যায়। এভাবে দেহের কোষগুলোর পুষ্টি সাধন হয়।
২. অক্সিজেন পরিবহন আমাদের দেহে সকল কাজের জন্য অক্সিজেন দরকার। অক্সিজেন না হলে জীবকোষ বাঁচতে পারে না। কাজেই খাবারের সাথে সাথে এদের দিতে হয় অক্সিজেন। রক্তের লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে। অক্সিহিমোগ্লোবিন রূপে প্রতিটি কোষে বহন করে।
৩. কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন রক্তরস দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কোষগুলোতে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইড বহন করে ফুসফুসে নিয়ে যায়।
৪. বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন: দেহে সৃষ্ট নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত দূষিত পদার্থ দেহ থেকে বের করে দেওয়ার কাজে সহায়তা করে।
৫. রোগ প্রতিরোধ: দেহে কোনো রোগজীবাণু প্রবেশ করলে রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা সেগুলোকে মেরে ফেলে রোগ প্রতিরোধ করে।
৬. হরমোন পরিবহন দেহের নালিহীন গ্রন্থিতে হরমোন উৎপন্ন হয়। রক্তের মাধ্যমে হরমোন দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।
৭. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ : রক্ত দেহের বিভিন্ন অংশের তাপ পরিবহন করে। এতে দেহের সর্বত্র তাপমাত্রা ঠিক থাকে।
৮. রক্ত জমাট বাঁধা: দেহের কোনো অংশ কেটে গেলে রক্তপাত হয়। অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ফলে রক্তপাত বন্ধ হয়।

নতুন শব্দ: লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা, রক্তরস, হরমোন ও নালিহীন গ্রন্থি।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion